COVID-19 - Coronavirus - প্রথমবার ডিসেম্বর 2019 এর শুরুর দিকে রিপোর্ট করা হয়েছিল।
এটি তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসাবে ঘোষণা করার জন্য তৎপর হয়।
কোভিড-১৯ বনাম সর্দি বনাম ফ্লু-র মধ্যে পার্থক্য কী?
কোভিড-১৯
আমাদের দেশে অনেককেই প্রতি বছর বেশ কয়েকবার জ্বর, সর্দি, কাশি, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও শরীর ব্যথায় ভুগতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণত ঠান্ডা ও ফ্লুর কারণে এ সমস্যা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাদুর্ভাব হওয়া মহামারি কোভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দিয়েছে। মহামারি এ ভাইরাসের কয়েকটি লক্ষণও সর্দি এবং ফ্লু’র সাথে মেলে। মানুষের শরীরে ওইসব সাধারণ লক্ষণগুলো দেখা গেলেও, প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা ছাড়া পেশাদার চিকিৎসকের পক্ষে এটা বুঝা কঠিন যে ওই ব্যক্তি ঠান্ডা বা ফ্লু নাকি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে অনেক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। কোভিড-১৯, সর্দি এবং ফ্লু এর লক্ষণগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে পড়ে দেখুন এ নিবন্ধটি।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণসমূহ
বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস ২০১৯। গত বছরের ডিসেম্বরের আগেও করোনাভাইরাসের নতুন এ প্রজাতিটি কখনও মানুষে দেখা যায়নি। করোনাভাইরাসের আরও চারটি প্রজাতি রয়েছে। তবে, প্রজাতির সংক্রমণগুলো প্রায়শই সাধারণ ঠান্ডার মতো মাঝারি ধরনের লক্ষণ সৃষ্টি করে। নতুন আবিষ্কৃত এ প্রজাতি কোভিড-১৯ মানবদেহে নির্দিষ্ট গ্রুপে মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের রোগ বা অন্যান্য মারাত্মক রোগে ভুগছেন তারা কোভিড-১৯ রোগে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে খরাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন বয়স্ক ব্যক্তিরা।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণগুলোর মধ্যে যা যা থাকতে পারে:
- জ্বর
- সর্দি
- অবসাদ (মাঝে মাঝে)
- গলা ব্যথা (মাঝে মাঝে)
- কাশি (সাধারণত শুকনো)
- মাথাব্যথা (মাঝে মাঝে)
- শ্বাস নিতে সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হওয়া
- শরীর ব্যথা (মাঝে মাঝে)
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর লক্ষণগিলো সাধারণত মাঝারি থেকে মারত্মক ধরনের হয়। মনে রাখবেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি খুব কমই উপরের শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা, অনবরত সর্দি অথবা সাইনাস জমে থাকার সমস্যায় ভোগেন।
যেসব ব্যক্তি সম্প্রতি কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়া দেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া উচিত। যদি কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংস্পশে আসে এবং তাদের মধ্যে এ লক্ষণগুলো থাকে তবে তাদের কোভিড-১৯ বিষয়ে ভাবা দরকার। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ উপসর্গ স্ব-মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আপনার লক্ষণগুলো পরীক্ষা করুন।
সর্দির লক্ষণ
ঋতু পরিবর্তনের সময়, অনেকেই সর্দি জ্বরে ভুগে থাকেন। সাধারণ সর্দি জ্বরের লক্ষণগুলো ভাইরাল ফ্লুয়ের তুলনায় অনেক কম। আপনি সাধারণ সর্দিতে ভুগছেন কিনা তা বুঝতে আপনি এ লক্ষণগুলো পরীক্ষা করতে পারেন।
- সর্দি
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা
- গলা ব্যথা
- কাশি (হালকা)
- হাঁচি
- ক্লান্তি (মাঝে মাঝে)
- চোখে পানি আসা
- মাথাব্যথা (খুব কমই)
- শরীর ব্যথা
সংক্রমণের বিরুদ্ধে মানব শরীরের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে এ লক্ষণগুলো বেশিরভাগ হয়ে থাকে। সর্দি জ্বরের ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ভালো প্রতিরক্ষা হলো মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আপনি যদি বর্ণিত লক্ষণগুলোর মুখোমুখি হন তবে ধৈর্য ধরুন এবং আপনার দেহকে তাদের প্রতিরোধ করার সুযোগ দিন। সাধারণ সর্দি আস্তে আস্তে চলে যাবে। সাধারণত, সর্দি জ্বর মানুষের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদে সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। চিকিৎসকদের দেয়া নির্ধারিত ওষুধগুলো সর্দির লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে।
ফ্লুর লক্ষণ
ফ্লু সাধারণত মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসাবেও পরিচিত। এটি সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে এক ধরনের ভাইরাল সংক্রমণ। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাক, গলা এবং ফুসফুসকে সংক্রমিত করে। ফ্লু-র কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- জ্বর
- ক্লান্তি
- সর্দি
- শরীর ব্যথা
- নাক দিয়ে পানি গড়া (মাঝে মাঝে)
- গলা ব্যথা (মাঝে মাঝে)
- নাক বন্ধ (মাঝে মাঝে)
- কাশি (সাধারণত শুকনো)
- ডায়রিয়া (মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মধ্যে)
ভাইরাল ফ্লু সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সর্দি বা কোভিড-১৯ এর বিপরীতে, ডাক্তারদের দেয়া ওষুধ মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জাকে সফলভাবে নিরাময় করতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো টিকা ছাড়াই সুস্থ হয়ে যান। আপনার মধ্যে যদি ফ্লুর লক্ষণগুলো থাকে, তবে, ঘর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। জ্বর কমানোর জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকতে আপনি কী করতে পারেন?
- হাঁচি, কাশি, নিশ্বাস-প্রশ্বাস এবং স্পর্শের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়। তাই, এক্ষেত্রে জরুরি কোনো দরকার না থাকলে বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেয়া হয়।
- আপনার হাত দুটি কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান এবং প্রবাহিত (গরম বা ঠান্ডা) পানিতে দিয়ে পরিষ্কার করুন। যদি সম্ভব না হয় তবে হাত জীবাণুমুক্ত করতে অ্যালকোহলযুক্ত (৬০ শতাংশ) হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- বাড়িতে ফেরার পরে, আপনার পরিধানে থাকা কাপড় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধুয়ে ফেলুন বা সূর্যের নীচে শুকানোর জন্য রেখে দিন।
- বাড়ির বাহিরে গেলে অন্য ব্যক্তিদের থেকে সর্বনিম্ন ৬ ফুট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।
- হাত ধোঁয়ার আগে আপনার মুখ বা চোখের কোনো অংশ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
- হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন এবং টিস্যুটি সঠিকস্থানে ফেলুন।
- এবং অবশ্যই বাড়ির বাহিরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরতে ভুলবেন না।
আর আপনি যদি এ নিয়মগুলো মেনে চলেন তবে আপনি সাধারণ সর্দি এবং ভাইরাসজনিত ফ্লু থেকে সহজেই বাঁচতে পারবেন।