শেষ পর্যন্ত উইন্ডোজকে “শুভ বিদায়” বলবেন?

কম্পিউটার নামক গণকযন্ত্রটির একজন আগ্রহী ব্যাবহারকারী যদি আপনি হয়ে থাকেন, তাহলে লিনাক্সের কথা আপনি অবশ্যই শুনে থাকবেন- হয়তো কোন নিউজপ্যাপার আর্টিক্যালে কিংবা আপনার অতি মেধাবী কোন বন্ধুর কাছ থেকে। আর বাজে ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে, আপনি লিনাক্স সম্পর্কে যতই জানবেন ততই যেন লিনাক্সের ব্যাপারে আপনার প্রশ্নগুলো বড় হতে থাকবে। ওরা বলছে- লিনাক্স নাকি বিনামূল্যের। এই সময়ে যখন পানিও টাকা দিয়ে কিনতে হয়- আমাদের এই আধুনিক অর্থকেন্দ্রিক জগতে কিভাবে একটি সম্পুর্ণ “কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম” বিনামূল্যের হতে পারে? প্রোগ্রামারদের বেতনই বা কে দেয়?

কম্পিউটারকে দুভাবে দেখা যায়। কম্পিউটার যেন একটা যাদুর বাক্স- আপনি চাইলে এটি দিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন, গেইম খেলতে পারেন। এভাবে দেখলে, যন্ত্রটি মনে হয় যেন একটি ডিভিডি প্লেয়ার- ডিভিডি ঢুকাও, বাটন প্রেস কর-ব্যাস। আপনার কম্পিউটারে আপনি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার নামের আইকনটাতে ক্লিক করেন, টাইপ করেন একটা ওয়েব এড্রেস, এবং কোথা থেকে জানি একটা ওয়েব পেইজ ভেসে আসে আপনার কম্পিউটার পর্দায়। ম্যাজিক, তাই না? এই আশ্চর্য্যরকম সহজ ব্যাপারটার পেছনের জটিল টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলোয় কার কি আসে যায়?

অন্যভাবে দেখলে, কম্পিউটার অনেকগুলো উপাদান/যন্ত্রাংশ নিয়ে বানানো একটা যন্ত্র যার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তৈরী করে থাকে। কখনো পিসি হার্ডওয়্যার আপগ্রেইড করেছেন? তাহলে আপনি এটা জানেন- পিসিতে একটা সিপিউ থাকে, হার্ডডিস্ক, গ্রাফিক্স কার্ড এবং আরো অনেক কিছু। আপনি চাইলে আপনার পিসির পুরনো পার্টস বদলে নতুন এবং তুলনামূলকভাবে ভালো কিছু দিয়ে পিসির পারফরম্যান্স, ডাটা রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

প্রায় সবাই যে ব্যপারটা বুঝতে পারেনা- অপারেটিং সিস্টেমও কম্পিঊটারের অন্যান্য অংশের মতোই- চাইলে একেও ভালো অন্য কোন বিকল্প দিয়ে বদলানো যায়। উইন্ডোজ বিনামূল্যে আসেনা, আর মাইক্রোসফটও উইন্ডোজ সরবারহ করে জনসেবা মূলক কিছু করছেনা। প্রতিটা কম্পিউটারের জন্য ব্যয় করা আপনার ৫০ থেকে ১০০ ডলার সোজা চলে যায় মাইক্রোসফটের পকেটে। হিসেব করুন তো একবার- বছরে তৈরী হওয়া শত শত মিলিয়ন কম্পিউটারের, এটা বুঝতে কারো মহাকাশ বিজ্ঞানী হতে হবেনা- কেন মাইক্রোসফট পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী করপোরেশান।

কিন্তু এই অর্থের মূল্য কি আমরা পাচ্ছি- এই প্রশ্ন খুব অবান্তর হবেনা। উত্তর- না। মাইক্রোসফটের প্রোডাক্টগুলো নিরাপত্তা ত্রুটিযুক্ত, যা প্রায়শই আমাদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর কপাল খারাপ হলে এর কারণে আমরা আমাদের জরুরী অনেক তথ্যই হারিয়ে ফেলি। বলতে গেলে- পিসি প্রস্তুতকারকদের উপর এক ধরণের মনোপলি নিয়ে মাইক্রোসফট একটা ধনী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো। যখন একজন বুদ্ধিমান ক্রেতা তার পিসির জন্য ইন্টেল নাকি এএমডির প্রসেসর কিনবেন তা বাছাই করতে পারেন, খুব কম ক্ষেত্রেই তিনি তার পিসির জন্য উইন্ডোজ ছাড়া অন্য অপারেটিং সিস্টেম বাছাই করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। চেষ্টা করেই দেখুন না- আপনার পরিচিত কোন কম্পিউটার বিক্রয়কেন্দ্রে ফোন করে বলুন যে আপনি উইন্ডজ ইন্সটল করা নাই এমন কম্পিউটার চান, আর শুনুন সেলসম্যান আপনার কথা বুঝতে না পেরে কেমন করছেন!

উইন্ডোজের শিকল থেকে মুক্তি পেতে পারলে খুব ভালো হতো- তাই না? কে চায় সারাক্ষণ ভাইরাস, ওয়ার্মের আক্রমণের ভয়ে আতংকগ্রস্ত থাকতে? শেষ পর্যন্ত উইন্ডোজকে “শুভ বিদায়” বলবেন?

আপনার কাছে বিকল্প আছে। লিনাক্সের জগতে স্বাগতম।


কৃতজ্ঞতাঃ লেখাটি মূলত Beginning Ubuntu Linux, 3rd Edition থেকে অনুবাদকৃত।

Comments

Popular Posts